স্বাস্থ্য

ডায়বেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

  dailydinlipi24 দৈনিক দিনলিপি ৩১ অক্টোবর ২০২৪ , ১:৩৯ এএম

আমাদের  বাংলাদেশে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা  বেড়েই  চলেছে , সাধারণত  এই রোগটি সম্পূর্ণ  নির্মুল করা সম্ভবাবনা কম  ডায়াবেটিস  নিয়ন্ত্রণ  করে চলতে  হয়।

 

ডায়াবেটিস  রোগীরা  সাধারণত  খাদ্য  নিয়ন্ত্রণ  রেখে নিয়মিত  খাবার গ্রহণ  করতে হয়।

চলুন জেনে নেই  কি খেতে পারবে ডায়াবেটিস রোগীরা

ডায়াবেটিস রোগীরা কি নিয়মিত  মিষ্টি খেতে পারবে?

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মিষ্টিজাতীয় খাবার  একদম  ক্ষতিকর। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীরা ইচ্ছে করলে  মাঝেমধ্যে খুব অল্প পরিমাণে মিষ্টি খেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই রক্তের শর্করা বা গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকা খুবই  আবশ্যক।

মিষ্টি খাওয়ার সময় কিছু নিয়ম মেনে খেতে হবে।

যেমন:
১। কখন ও  খালি পেটে মিষ্টি খাওয়া  একদম  যাবেনা, এতে হঠাৎ করে রক্তে  সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

 

২।  রাতে কখনো  মিষ্টি জাতীয় খাবার  খাবেন না। দিনের বেলায় যেহেতু সারাদিন কাজ-কর্ম করা হয়, তখন আমাদের   শরীর সচল থাকে, তখন খাবেন।

৩। সকালে অথবা  দুপুরে কার্বহাইড্রেট বা শর্করা এবং প্রোটিন জাতীয় কিছু  খাবার খেয়ে পরে মিষ্টি খাওয়া উচিত।

 

 

৪। মিষ্টির  রস ফেলে দিয়ে খেতে হবে। মিষ্টির শিরা খাওয়া যাবেনা একদম।

 

ডায়াবেটিস রোগীর পরিণম:

ডায়াবেটিস  বহুমূত্ররোগ বা ডায়াবেটিস (যা ডায়াবেটিস মেলাইটাস নামেও পরিচিত) হলো একটি গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা যেটি ঘটে যখন রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা দীর্ঘসময় ধরে এটা   স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কারণ হয় শরীর যথেষ্ট পরিমাণে বা কোনো ইনসুলিন উৎপাদন করে না এবং  উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না।

খেতে  পারেন ফলমূল :

 

ডায়াবেটিস হলে অনেকেই ভয়ে মিষ্টি জাতীয় ফল খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দেন। যেটা মারাত্মক  ভূল।

 

ডায়াবেটিস   বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, ফলের ভিতরে সুগার আছে, খেতে মিষ্টি লাগে এটা ঠিক। কারণ ফলের ভিতরে ফ্রুকটোজ রয়েছে এবং এই ফ্রক্টোজ যে আপনার সুগার একদম বাড়াবে না তা কিন্তু নয়. কিন্তু আপনি ফল খেতে পারবেন কোন অসুবিধা নেই ।

 

 

ডায়বেটিস রোগীরা প্রত্যেকেই ফল খেতে পারবেন এবং আপনি সকল ফলই খেতে পারবেন, কোনো ফলই ডায়বেটিস রোগীর জন্য কোন প্রকার  নিষেধ নেই।

তবে এক্ষেত্রে আপনাকে শুধু একটু  পরিমিত খাওয়া উচিত ,  যেমন  যে ফল অনেক বেশি মিষ্টি সেগুলো আপনি একটু পরিমাণে কম খাবেন, আর যে ফল কম মিষ্টি বা টক জাতীয় সে ফলটা আপনি পরিমানে একটু বেশি খেতে পারবেন।

বহুমূত্ররোগ

 

ডায়াবেটিস   অথবা  বহুমূত্র রোগ একটি দীর্ঘ সময় ব্যাপী বিপাকীয় রোগব্যাধি যা ইনসুলিনের অভাব বা ইনসুলিন।
বহুমূত্ররোগ বা ডায়াবেটিস (যা ডায়াবেটিস মেলাইটাস নামেও পরিচিত) হলো একটি গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা যেটি ঘটে যখন রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা দীর্ঘসময় ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কারণ হয় শরীর যথেষ্ট পরিমাণে বা কোনো ইনসুলিন উৎপাদন করে না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন  তেমনভাবে  কার্যকর ব্যবহার করতে পারে না।উপসর্গগুলো হলো ঘনঘন প্রস্রাব (পলিইউরিয়া), অত্যধিক তৃষ্ণা (পলিডিপসিয়া) এবং অত্যধিক ক্ষুধা (পলিফেজিয়া)।চিকিৎসা না করালে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়।তাৎক্ষণিক জটিলতার মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস, হাইপার‌অসমোলার হাইপারগ্লাইসিমিক স্টেট অথবা মৃত্যু। গুরুতর দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার মধ্যে রয়েছে হৃদ্‌যন্ত্র ও রক্তবাহের রোগ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি, ডায়বেটিসজনিত পায়ের ক্ষত, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ও চিন্তাশক্তির লোপ।

 

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ সমূহ : ঘনঘন প্রস্রাব , অত্যধিক তৃষ্ণা  ও অত্যধিক ক্ষুধা।

সংঘটনের  হার ৫৩ কোটি  ৭০ লক্ষ এবং মৃতের  সংখ্যা  ৬৭ লক্ষ

বহুমূত্ররোগে হয় অগ্ন্যাশয়   ঠিকমতো ইনসুলিন উৎপাদন করে না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিনের প্রতি দেহের কোষগুলো যথাযথভাবে সাড়া প্রদান করে না।
বহুমূত্ররোগের সাধারণত তিনটি প্রধান ধরন রয়েছে:টাইপ ১ ডায়াবেটিস যখন হয়  অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ বিনষ্ট হওয়ার ফলে যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় না।
পূর্বে এটি ইনসুলিন-নির্ভরশীল ডায়াবেটিস মেলিটাস অথবা জুভিনাইল ডায়াবেটিস নামে পরিচিত ছিল।বিটা কোষ বিনষ্ট হওয়ার কারণ হলো অটোইমিউন বিক্রিয়া অটোইমিউনের সঠিক কারণ এখনও অজানা। বিটা কোষ ধ্বংসের হার বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে। এটি যে-কোনো বয়সে হতে পারে, তবে শিশু ও তরুণদের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি। ১০-১৪ বছর বয়সীদের  ক্ষেত্রে এই হার শিখরে পৌঁছে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস শুরু ইনসুলিন রোধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যেখানে কোষ ইনসুলিনের প্রতি যথাযথ সাড়া প্রদানে ব্যর্থ হয়। রোগের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ইনসুলিনের ঘাটতিও তৈরি হয়।

  • এটি পূর্বে ইনসুলিন-অনির্ভরশীল ডায়াবেটিস মেলিটাস নামে পরিচিত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হলো শরীরের অত্যধিক ওজন ও কায়িকশ্রমের অভাব।
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলো তৃতীয় প্রধান ধরন। এটি হয় যখন একজন গর্ভবতী মহিলা যার ইতঃপূর্বে কখনো ডায়াবেটিসের ইতিহাস ছিল না কিন্তু গর্ভধারণ করার পর রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা বেড়ে যায়।

টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ইনসুলিনের ব্যবহার আবশ্যক।টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও তামাকের ব্যবহার এড়িয়ে চলা। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ইনসুলিনসহ বা ইনসুলিন ছাড়া মুখে সেবনীয় ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পা ও চোখের যত্ন নেওয়া এই রোগে খুবই অত্যান্ত জরুরি।

ইনসুলিন ও কিছু মুখে সেবনীয় ওষুধ রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে যা হাইপোগ্লাইসিমিয়া নামে পরিচিত।

 

যে-সকল স্থূল ব্যক্তি টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের ওজন কমানোর শল্যচিকিৎসা খুব উপকারে আসে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সাধারণত বাচ্চা প্রসবের পর ভালো ফল  হয়ে যায়।

২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৬ কোটি ৩০ লাখ (৮.৮% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ), যার মধ্যে ৯০% টাইপ ২ ডায়াবেটিস।২০২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ কোটি ৭০ লাখে।নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে এই রোগের হার একই।

এই রোগের প্রাদুর্ভাব হার ভবিষ্যতে আরও অনেক  বৃদ্ধি পাবে। ডায়াবেটিস রোগীদের  অকাল মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ।

 

২০১৯ সালে, ডায়াবেটিস রোগে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৪২ লাখ মানুষের,২০২১ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৬৭ লাখে।এটি বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ।

২০১৭ সালে বৈশ্বিক ডায়াবেটিস সম্পর্কিত স্বাস্থ্য খরচ ছিল প্রায় ৭২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার,যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালে ডায়াবেটিস খরচ ছিল প্রায় ৩২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।ডায়াবেটিস রোগীদের গড় চিকিৎসা খরচ অন্যদের তুলনায় প্রায় ২.৩ গুণ বেশি।

 

 

 

প্রতিবছর ১৪ই নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস   হিসেবে পালন করা হয়।বিশ্বজুড়ে দ্রুততার সাথে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকায় আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন ও বিশ্ব  স্বাস্থ্য সংস্থা  ১৯৯১ সালে ইনসুলিনের সহ-আবিষ্কারক ফ্রেডরিক ব্যানটিং -এর জন্মদিনটিকে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। 

 

ডায়াবেটিস দিবস ০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশ্বের  জাতিসংঘ ৬১/২২৫ নম্বর প্রস্তাব পাশের মাধ্যমে এটিকে জাতিসংঘের অফিসিয়াল দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০০৭ সাল থেকে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের সার্বজনীন প্রতীক হিসেবে মাঝখানে ফাঁকবিশিষ্ট নীল বৃত্ত ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বৃত্তের মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বৈশ্বিক ডায়াবেটিস সম্প্রদায়ের ঐক্যকে বুঝায়।

 

আকাশ  এবং  জাতিসংঘের পতাকার রঙের সাথে মিল রেখে বৃত্তের রং নীল রাখা হয়েছে, যার তাৎপর্য হলো নীল আকাশের নিচে সমগ্র মানবজাতির বসবাস ও জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের সমগ্র দেশ ঐক্যবদ্ধ থেকে একসাথে এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে